জীবনে এমন কত বিচ্ছেদ, কত মৃত্যু আছে, ফিরিয়া লাভ কি? পৃথিবীতে কে কাহার…

khomeniআধুনিক ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের (The Islamic Republic of Iran) স্থপতি ইমাম খোমেনি (Iman Khomeini) ১৯০১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর (১৩২০ হিজরির ২০ জমাদিউস সানি) ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে খোমেইন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খোমেইন শহরে জন্মেছিলেন বলে তিনি খোমেইনি বা খোমেনি নামে পরিচিত। তার প্রকৃত নাম রুহুল্লাহ এবং পরবর্তী সময়ের নাম আয়াতুল্লাহ আল-মুসাভি আল-খোমেনি। তার বাবার নাম আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মুস্তফা মুসাভি এবং মায়ের নাম হাজার।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে রুহুল্লাহ ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। শিক্ষায় হাতেখড়ি হয়েছিল তার বড় ভাই আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মুর্তজা পসদ্দিদাহর কাছে। স্থানীয় মক্তবে লেখাপড়া শেষে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমে আরাক এবং পরে ধর্মতত্ত্বের বিখ্যাত কেন্দ্র কোম নগরীতে যান। ১৯২৭ সালের মধ্যে তিনি ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার সর্বোচ্চ ধাপ শেষ করেন। তিনি আরবি সাহিত্য, দর্শন, তফসির, হাদিস, আইনশাস্ত্র, রহস্যবিজ্ঞান (Gnostic Science), ইরফান (আধ্যাত্মিক জ্ঞান) প্রভৃতি বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং সুপ-িতরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। আয়াতুল্লাহ হায়েরি, আয়াতুল্লাহ বুরুজার্দি, আয়াতুল্লাহ তাবাতাবাঈ প্রমুখ শিক্ষক তার ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। ১৯৬১ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের প্রধান আয়াতুল্লাহ হন।
ইমাম খোমেনি যেমন ছিলেন সফল রাষ্ট্রনায়ক, তেমনি ছিলেন প্রথম শ্রেণীর কবি, সাহিত্যিক, বক্তা ও দার্শনিক। তার রচিত ছোট-বড় ৮২টি পুস্তক-পুস্তিকা সাহিত্যকীর্তির সাক্ষ্য বহন করছে। এছাড়া তিনি আধ্যাত্মিক কবিতা রচনা করেছেন ৩০০টিরও বেশি। তার কিছু কবিতা বাংলা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে ‘ইমাম খোমেনির কবিতা’ নামে।
ইরানের শাহের বিরুদ্ধাচরণ করায় ১৯৬৩ সালে ইমাম খোমেনিকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। তিনি প্রথমে তুরস্ক এবং পরে ইরাকে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। শাহের সঙ্গে ইরাক সরকারের সহযোগিতার কারণে তিনি ১৯৭৮ সালের ৩ অক্টোবর ইরাক থেকেও বহিষ্কৃত হন। তখন তিনি ফ্রান্সে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বিদেশে নির্বাসনে থাকলেও স্বদেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল নিবিড়। ইমাম খোমেনির ডাকে এবং নেতৃত্বে ইরানের মানুষ মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে রেজা শাহ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। দীর্ঘ ১৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ইমাম খোমেনি ১৯৭৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং ইরানে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন।
১৯৮৯ সালের ৪ জুন ইমাম খোমেনি ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনি ৪০ বছরেরও অধিককাল কোমের যায়জিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। এ সময়েই তার হাতে অনেক যোগ্য ছাত্র তৈরি হয় এবং তারাই ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তারাই দেশ পরিচালনা করছেন।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান