জীবনে এমন কত বিচ্ছেদ, কত মৃত্যু আছে, ফিরিয়া লাভ কি? পৃথিবীতে কে কাহার…

ধূমপায়ী ছিলেন তরুণ মনোবিজ্ঞানী ওয়াল্টার মিশেল। আজ থেকে ৫০ বছর আগের ঘটনা। তিনি হাঁটছিলেন স্ট্যানফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে। ওই সময়ই এক ঘটনার প্রেক্ষিতে তার ধূমপানের বিষয়ে বড় একটি ভয় মনে ঢুকে গেলো।
প্রফেসর নিজেই জানালেন, তখন বয়স ছিলো ৩২ বছর। এক লোক হুইল চেয়ারে বসে রয়েছেন। তার দেহে সবুক রংয়ের ইংরেজি এক্স (X) চিহ্ন দেওয়া। তার সঙ্গে একজন নার্সও ছিলেন। জিজ্ঞাসা করলে ওই নার্স জানালেন, এই সবুজ চিহ্নিত অংশে রেডিয়েশন চিকিৎসা দেওয়া হবে। তার সমস্যা হয়েছে তামাকে আসক্তির কারণে। মৃত্যু পথযাত্রী এই ভদ্রলোককে এখন বাঁচাতে পারছে না তামাক।
সেখান থেকেই একটা উপলব্ধি এলো প্রফেসরের। তারও একই অবস্থা হবে যদি সিগারেট খেতেই থাকেন। আজ তার ৮৪ বছর বয়স হয়েছে। ওই দিন ওই উপলব্ধি যদি না আসতো, তবে আজ অবধি তিনি বেঁচে থাকতেন না। এখন তিনি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর।
সিগারেটের এই ভয়ংকর ছোবল থেকে অন্যদের বাঁচাতে তিনি মনোবিজ্ঞানে যোগ করেছেন ‘দ্য মার্শমেলো টেস্ট : মাস্টারিং সেলফ কন্ট্রোল’। এটি প্রথমে তেমন সফলতা না দেখলেও এখন তত্ত্বটি ব্যাপক কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। শুধুমাত্র সিগারেটের পরিণতি দেখে বা বুঝেই নিজেকে ধূমপান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না এবং এর জন্য আরো বেশি কিছু চাই। আর সেখান থেকেই এই তত্ত্বের জন্ম।
প্রফেসর চিন্তা করেন, মানুষের মাঝে এমন উপলব্ধি আসতে হবে যেনো মনে হয় এখনই তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন। আর এই অনুভব তার মনে সব সময়ের জন্য থেকে যাবে। এটিই তাকে ধূমপানের মতো কাজ থেকে বের করে আনতে পারবে যা পুরোটাই মনোবিজ্ঞানের বিষয়।
এ কাজ করতে গিয়ে তরুণ মনোবিজ্ঞানী প্রথমে নিজেকে ওই হুইল চেয়ারে বসা মানুষটির স্থানে বসিয়েছেন। কল্পনায় নয়, সত্যি সত্যি। তিনি ওই লোকের মতো একটি পোশাক পরেছিলনে, মাথার চুল ফেলে দিলেন এবং গোটা দেহে সবুজ ক্রস চিহ্ন এঁকে দিলেন যেখানে রেডিয়েশন দেওয়া হবে। এই অবস্থায় নিজেকেই কিছু কথা বললেন, ‘আমার মাঝে তামাকের এক কৌটা নিকোটিন রয়েছে। আমার সিগারেটের পাইপ এবং প্যাকেট সবই জঞ্জাল। এর সবই নিকোটিন বিষে পরিপূর্ণ এবং এরা সব সময়ই আমার মাথায় সমস্যা করছে।’
এভাবে প্রায়ই একটি হুইল চেয়ারে বসতেন তিনি। আর তখনই অন্যরকম একটি অনুভূতি আসতো। এক সময় হঠাৎ করেই অনুভব করলেন, সেই নেশাপূর্ণ সিগারেটের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।
মিশেল বলেন, এভাবে নিয়ন্ত্রণকে বিস্তারিত করে তুলতে হয় আমাদের মাঝে। তাৎক্ষণিক চাহিদা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং এক সময় তা হারিয়ে যাবে। এটা মনোবিজ্ঞানের অংশ। যদি আপনি ক্রমাগত ভাবতে থাকেন ভিন্ন কিছু, তবে তাই ঘটবে আপনার মাঝে।
কালের কণ্ঠ

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান