আপনি সপ্তাহে কয়দিন অফিস করেন? হয়তো ৫/৬ দিন। চাকরিটা বেসরকারি হলে সাত দিনও করতে হতে পারে। একবার চিন্তা করুন আপনি যদি আপনার বসকে বলে বসেন-আপনি সপ্তাহে তিন দিন কাজ করতে চান, তবে কি আপনার চাকরি থাকবে?
সাধারণ কোনো বস কী করবেন তার উত্তর জানা না গেলেও, একজন বিখ্যাত বস কিন্তু আপনার এই প্রস্তাবকে সানন্দে মেনে নিবেন-বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা ধনী—কার্লোস স্লিম হেলু। মেক্সিকোর এই ধনকুবের দর্শন এমনটাই, ‘কাজের ব্যাপারে আমরা সবাই ভুল ধারণার মধ্যে আছি। আমাদের সপ্তাহে মাত্র তিন দিন কাজ করা উচিত।’
মানুষের কত বয়স পর্যন্ত কাজ করা উচিত, সেই ব্যাপারেও বিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী প্রচলিত নিয়ম ভাঙার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, ৫০ থেকে ৬০ বছরে কাজ থেকে অবসর নেওয়ার যে নিয়মনীতি রয়েছে সেটাকে এখন কাঠামোগতভাবে ঢেলে সাজানোর সময় এসে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত কাজ করা উচিত।’
স্লিম বলেন, ‘মানুষ ৭০-৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে পারে। আর সপ্তাহে কাজ করবে তিন দিন। তবে ওই তিন দিন কাজের সময় হবে ১১ ঘণ্টা।’
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্দেশনা অনুযায়ী, দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা।
প্যারাগুয়েতে এক ব্যবসায়ী সম্মেলনে তিনি এসব অভিমত দেন। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহে তিন দিন কাজ করলে আমাদের হাতে বিশ্রাম নেওয়া ও আরাম-আয়েশ করার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকবে; যা মানসম্পন্ন জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন। সপ্তাহে চার দিন ছুটি পেলে অনায়াসে বিনোদনসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা যাবে। এটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণও বটে।’
কার্লোস স্লিম মনে করেন, সপ্তাহে তিন দিন কাজ ও চার দিন ছুটি থাকলে তাতে জীবন একঘেয়ে হয়ে উঠবে না, বরং এটি হবে মজার। এর ফলে শ্রমশক্তি অধিকতর সুস্থ-সবল ও উৎপাদনশীল হয়ে উঠবে। এ ছাড়া আর্থিক সচ্ছলতা ও দীর্ঘায়ু লাভের একটি যোগসূত্র তৈরি হবে।
স্লিমের কথা আর কাজের মধ্যে দারুণ মিল আছে। কারণ নিজের কোম্পানিতে তিনি কর্মীদের সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দেন। অর্থাৎ তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সপ্তাহে চার দিন কাজ করে পূর্ণ বেতনই পান। তাঁর কোম্পানিতে কর্মীরা যৌবনের শুরুতেই যোগ দেন এবং বয়স ৫০ বছর হওয়ার আগে স্বাভাবিক অবসর নেন। তবে এরপর তাঁরা স্বেচ্ছায় কাজ করতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হয়।
কার্লোস স্লিম নিছক এক সাদামাটা অবস্থা থেকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। তিনি ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর বিশ্বের সেরা ধনী হন। ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ধনসম্পদ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের নিয়েই বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস প্রতিবছর বিশ্বধনীদের এই তালিকা তৈরি করে থাকে।
স্লিমের মূল ব্যবসা টেলিফোনের। মেক্সিকোর টেলিযোগাযোগ বাজারে ফিক্সড-লাইন ফোনের ৮০ শতাংশ ও মোবাইল ফোনের ৭০ শতাংশই রয়েছে যথাক্রমে তাঁর টেলমেক্স ও আমেরিকা মোবাইলের দখলে।
স্লিম টেলমেক্স, আমেরিকা মোবাইল ও গ্রুপো কারসোর চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। বর্তমানে তাঁর মোট ধনসম্পদের মূল্য আট হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।
মন্তব্য করুন