কা জী শ রী ফ উ দ্দি ন আ হ মে দ
আমরা চিরকালই একটু বেশি বেশিই বুঝি এবং চিরকাল এভাবে একটু বেশি বোঝার খেসারত দিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। ইংরেজি ভাষাকে পুরো পৃথিবী আজ গ্রহণ করেছে দৈনন্দিন কাজকর্মের বাহক হিসেবে। ইংরেজিকে আজ আর কেউ ইংরেজদের ভাষা বলে মনে করে না। এটা এখন সার্বজনীন ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। ইংরেজ নিজেও কোন দিন বলেনি আমাদের ভাষা নিয়ে তোমরা বড়াই কর কেন। ইংরেজি বহু আগে থেকেই সার্বজনীন স্বীকৃত ভাষা, যে ভাষার মাধ্যমে পৃথিবীর সব মানুষ দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাচ্ছে। তা হলে এই ভাষাটা পৃথিবীর সব মানুষেরই সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে হবে বইতো অন্য আর কোন উপায় আছে? নেই। যার যার মাতৃভাষা প্রত্যেকের সবচেয়ে আপন এবং এই মাতৃভাষার জন্য আমরা অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছি। সমস্ত পৃথিবীতে আজ তা স্বীকৃত। ১৯৭১ সালের পর থেকে আমরা দেশে বাংলাভাষায় সম্পূর্ণ কাজ চালাচ্ছি। আমরা আমাদের মাতৃভাষার উন্নয়নে অনেক দূরে এগিয়ে গেছি, যা খুব কম দেশই পেরেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ইংরেজিও সঠিকভাবে নিচ্ছি এবং তাই দেশটা বাংলাভাষার উন্নয়নে অনেক দূর এগুতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাভাষার পাশাপাশি এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি ভাষাটিকে আমরা চাচ্ছি নির্বাসনে পাঠাতে, যখন সমস্ত পৃথিবীতে প্রায় সব দেশ ইংরেজি শিখার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কেন অতটুকু বুদ্ধি কি আমাদের এত বড় বড় বুদ্ধিজীবীদের নেই? øাতক শ্রেণীতে চটি একটি ইংরেজি বই পড়ানো হয়। যাতে ইংরেজির সঙ্গে ছেলেমেয়েদের সামান্য হলেও যোগাযোগটুকু থাকে। কিন্তু চেয়ে দেখেন সেই বইটুকুও বাতিল করে কয়েকবার øাতক শ্রেণী থেকে ইংরেজি উঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা হলে প্রথমেই যে বলেছিলাম, আমরা চিরকাল একটু বেশিই বুঝিÑ কথাটি ঠিক বলিনি? কোথায় ইংরেজিকে আরও বাধ্যতামূলক করবে, নয় তো তা উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। কেমন বুদ্ধিজীবীদের একে বুদ্ধির ঘনঘটা বুঝতে পারি না। শিক্ষা বিভাগে একেকজন কর্ণধার হয়ে বসে আছেন বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে কি কারণে? যদি শিক্ষা বা জাতির মেরুদণ্ডকে কিভাবে সোজা করা যায় তার সম্যক জ্ঞানও তাদের না থাকে, তবে তাদের বড় বড় চেয়ারগুলো দিয়ে দেশের ও দশের কি উপকার হচ্ছে?
আমাদের সমস্যা হচ্ছে অনেক বড় বড় জিনিস আমরা বুঝে ফেলি। কিন্তু অনেক ছোট ছোট জিনিস বুঝি না। প্রাইমারি স্কুল থেকে সঠিক শিক্ষিত লোকজনকে নিয়োগ করুন বেশি পয়সা দিয়ে অন্য বড় চাকরির সমান। তারপর ছেলেমেয়েদের ইংরেজির গাঁথ্নি দিন। দেখুন ইন্টারমেডিয়েটের মধ্যেই তারা ইংরেজিতে কেমন ধারালো হয়ে গড়ে উঠেছে। তাহলে এরপর আর জীবনে কোনদিন এদের ইংরেজি-ভীতি থাকবে না। øাতক শ্রেণীর তখন যে চটি বইটি পড়ানো হতো ওইরকম আরও দুটো বই পড়ালেও তাদের গায়েই লাগবে না।
এবার অন্য কথায় আসি। বেশি বোঝার খেসারত আমরা আরও কিভাবে কিভাবে দিই তাই দেখুন। ‘ঢা’ ‘কা’ ঢাকা আমরা সঠিকভাবেই লিখছি এবং সঠিকভাবে উচ্চারণ করছি। আমরা তাকে ‘দাক্কা’ বলছি না। ‘দাক্কা’, ‘ডাকা’ ‘ডাক্কা’ ইত্যাদি বলছে বিদেশীরা এবং ইংরেজরা তাদের ভাষায় ঢাকার নাম দিয়েছে ‘উঅঈঈঅ’। আমরা কিন্তু সেই ঢাকা ঢাকাই বলছি। দাক্কাও বলছি না, দাকাও না। আমরা আমাদের ভাষাকে অন্যরকম কোনক্রমেই করিনি। তাহলে ‘উঅঈঈঅ’ যখন ইংরেজ-রা লিখছে তখন তাদের-ভাষায়-তা লিখছে। আমরা ইংরেজিতে লিখলে তাদেরকেই অনুসরণ করতে হবে কারণ ইংরেজি ভাষা আমাদের নয়। ‘চঁঃ’-কে পাট, ‘ইঁঃ’-কে বুট আমরা করতে পারি-কি? পারি না, পারিনি এবং পারব না। তাহলে তাদের ভাষা ‘উঅঈঈঅ’-কে কিভাবে চেঞ্জ করে ফেললাম? এবং তা কেন? এতে উপকার কি হয়েছে? উপকার হয়েছে বা অপকার হয়েছে? সাইনবোর্ড আর ইত্যাকার কোটি কোটি জিনিস পরিবর্তন করে পুনরায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে তা লিখতে হয়েছে এবং এর কারণ কি? বিনা কারণে এমন ভুল একটা সিদ্ধান্ত বোধকরি আমরাই নিতে পারি, যারা আমরা একটু বেশিই বুঝি।
বড় বড় কথা বলে হাঁপিয়ে উঠেছি। এবার একটু হালকা রসিকতার কথা বলি। বড় বড় বুদ্ধিমানরা আমরা নিজের ঘরেই বিরাট বিরাট ও ছোট ছোট সব ভুলই করি। আমরা কি করি। কাপড় কতগুলো ধুয়ে-উল্টে নাড়ি শুকোবার জন্য। ধরুন প্যান্টটা ধুয়ে উল্টো নেড়ে দিলাম। কারণ ধুলো-বালি যেন প্যান্টের সোজা অংশে না লাগে। সারাজীবন প্রায় সবাই তাই করে আসছে। কিন্তু এ কথাটা আমরা কেউ ভাবি না ধুলো-বালি বা যে কোন বায়ুবাহিত জিনিস প্যান্টের উল্টো দিকে লাগলে তা সরাসরি শরীরে গিয়ে লাগবে যা ক্ষতিকারকও হতে পারে। বাইরের প্যান্টের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য আমরা চর্মরোগে আক্রান্ত হতেও রাজি আছি, কিন্তু সঠিক কাজটি করব নাÑ প্যান্টটি সোজা নেড়ে দেব না।
বড্ড সাধারণ আরেকটি জিনিস। ধরুন একটা নতুন শাড়ি কিনে আনলেন স্ত্রীর জন্য। স্ত্রী শাড়িটি দেখে বেশ খুশি হল ও সুন্দর করে আলমারিতে তুলে রাখল। পরে যখন বাইরে যাবে তখন বাইরের মানুষের মনরাঙানোর জন্য পরিধান করে বের হবে। স্বামীও খুশি হবে সুন্দর লাগছে দেখে। কিন্তু আমার তো মনে হয় শাড়িটি এনেই স্ত্রীকে বলব পরিধান করে আসতে। এটাই তো কাম্য হওয়া উচিত, তাই নয় কি
আমরা এত বুঝে তাও বুঝি না যে ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা পাওয়া যায়। শ্রদ্ধা করলেই শুধু শ্রদ্ধা পাওয়া যায় না। এত কাঠখড় পুড়িয়ে সবাই সংসদে এলেন। এসেই শুরু করলেন বিরোধী দলের বদনাম আর বদনাম। কেন একটু ভালোবাসা নিয়ে, একটু শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বিরোধী দলের মন জয় করে একটা শক্তিশালী সংসদ গড়ে তোলা যায় না। অবশ্যই যায়। সেই মনোবৃত্তি থাকতে হবে। ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। লাভ কি বৃথাই এই ঢিল আর পাটকেলের খেলা আবার শুরু করা? সবাই বাংলাদেশের একই রকম মানুষ। তা বিএনপি বলেন আর আওয়ামী লীগ বলেন, সবাই আমরা ভাত খাই, ভাত ছাড়া বাঙালির প্রাণ বাঁচে না। আমরা একই বাড়ির ও পাড়া প্রতিবেশীর লোক। কারও ভাই, কারও চাচা, কারও বোনÑ এই তো আমরা সংসদেও। তাহলে আমরা সবাই মিলে সংসদকে শক্তিশালী করতে এগিয়ে যাই না কেন? দেশ ও জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তা না করে কবে কাউকে কোন একটি জমি দান করা হয়েছিল সরকার থেকে। সেটা থেকে তাকে উৎখাত করার জন্য লেগেছেন। দান করা জিনিস কি কোন দিন ফেরত নেয়া যায়? দুনিয়া ছাড়া চিন্তাধারা আমাদের। যেহেতু আমরা একটু বেশিই বুঝি!
কাজী শরীফ উদ্দিন আহমেদ : শিক্ষাবিদ, আমেরিকা প্রবাসী
আমরা একটু বেশি বুঝি
07
07
09
Advertisements
মন্তব্য করুন