মাখরাজ খান
পৃথিবীতে কত বছর আগে ডাইনোসরের অস্তিত্ব ছিল এ নিয়ে মতভেদ প্রচুর। কেউ বলেন এই অতিকায় ভয়ঙ্কর প্রাণীটি পৃথিবীর অন্যন্য আদিম প্রাণীকুলের সঙ্গে ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে বিরাজমান ছিল। কারো কারো মতে, এই প্রাণীটি পৃথিবীতে ছিল আরো আগে। কিন্তু এদের ধ্বংস কিভাবে হলো? এ বিষয়ে গবেষকরা একমত যে, এই আদিম প্রাণীকুলের লয় ঘটেছে আকাশ থেকে পতিত কোনো বস্তুর আঘাতে। আকাশ থেকে বস্তু পড়লো আর এই শক্তিশালী প্রাণীকুল ধ্বংস হয়ে গেল। কেমন ছিল সেই পতিত বস্তুর রূপ, ওজন, ধ্বংস ক্ষমতা? আজকের আলোচনার বিষয় এটিই। আকাশ থেকে পতিত বস্তুর আগে ডাইনোসরের বিলুপ্তি সংক্রান্ত ধারণার উদ্ভব হয় কয়েক দশক আগে। রিচার্ড মিলারের দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে একটি লেখা প্রকাশ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়। ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার কারণ যদি আকাশ থেকে পতিত কোনো শিলাখ- বা বজ্রপাত অথবা আবাবিল পাখির পাথর নিক্ষেপের ঘটনার মতো কোনো কারণ হয়ে থাকে তাহলে মিসরের পিরামিড এখনো টিকে আছে কি করে? তা হলে কি মিসরের পিরামিডের মধ্যে এমন কোনো লুক্কায়িত প্রযুক্তি রয়েছে, যার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগও এটাকে ধ্বংস করতে পারছে না। এই প্রশ্নটি উত্থাপনের পর ডাইনোসর থেকে গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে পিরামিড। পিরামিডকে এক্সরে করে দেখা যায়, এতে গোপন কোনো চেম্বার নেই। বিষয়টি আবার গড়ায় ডাইনোসরের দিকে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ এবং অধ্যাপক একটি শিলাখ- প্রদর্শন করে বলেন, এটি প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি বছরের পুরনো পাথরখ-। এটি ইতালিতে পাওয়া গেছে। এ ধরনের অসংখ্য শিলাখ- বৃষ্টির ফোঁটার মতো ডাইনোসরের গায়ে পড়ার দরুন এর লয় ঘটেছে।
যে পাথরখ- ওয়ালটার জনসমক্ষে দেখিয়েছিলেন সেটি ছিল ফসিল। এতে রঞ্জনরশ্মি ফেলে দেখা গেল ওয়ালটার যে সময়ের কথা বলছেন পাথরটি ওই সময়েরই; কিন্তু এতেই কি প্রমাণ হয় আকাশ থেকে পাথরবৃষ্টি হতো আর ডাইনোসর মরে গেল? ডাইনোসর ধ্বংসের কারণগুলো হিসেবে এর আগে যেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছিল এর মধ্যে ছিল আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত সমুদ্রের পানির অধিকতর লবণাক্ততা অথবা কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ডাইনোসরের বসতি এলাকায় বায়ু এবং পানি দূষিত হয়ে যাওয়া। এরপরও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে ভাবতে থাকেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, আনুমানিক ২ কোটি বছরের আগে পৃথিবীতে মহা ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়েছিল, তাতেই ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটে। এই মতবাদটি নেমেসিসহাটনোথিসস নামে প্রকাশিত হয়Ñ এর অর্থ হচ্ছে গ্রিক দেবীদের গর্বিত ডাইনোসরের গর্বচূর্ণ। এই থিওরিতে বলা হয়, প্রতি দুই কোটি ৬০ লাখ করে পরপর পৃথিবীর বুকে মহা ধ্বংসলীলা নেমে আসে আর এতে ওই সময়ের সব প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর শুরু হয় নতুন প্রাণীর আবির্ভাব। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সব ধ্বংস বললেই কি ধ্বংস হয় সবকিছু? আধুনিক বিজ্ঞানীরা তো সম্প্রতি গবেষণা করে দেখিয়েছেন, নিরীহ মুরগিই ডাইনোসরের বিবর্তিত বংশধর। তাই যদি হয় তা হলে ডাইনোসরের সঙ্গেই তো আমরা বসবাস করছি।
মুরগিই ডাইনোসরের বিবর্তিত বংশধর!
01
07
09
Advertisements
মন্তব্য করুন